History of Seljuk Empire #2 | Arsalan Yabgu | Katatar Production

সেলজুক সম্রাজ্যের ইতিহাস, পর্ব-২ | আরসালান ইয়াবগু

সেলজুক বেয়ের মৃত্যুর পর উনার ছেলে আরসালান ইয়াবগু সেলজুক ভূমির নিয়ন্ত্রন নেন। আরসালান বে একজন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পন্ন ব্যাক্তি ছিলেন, জান্দ শহরে থাকা উনার ভাতিজা তুগ্রুল বে আর চাগরি বে বুঝতে পারেন, এই তাদের পক্ষে বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব হবেনা। তাই তারা তাদের চাচা আরসালান ইয়াবগুর সাথে আপোষ করে, জান্দ শহর থেকে নূর জেলায় চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। এই সুযোগে অঘুজ ইয়াবগু্র শাসক জান্দ শহরের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়।

আরসালান ইয়াবগুর সাথে কারাখানলির বিদ্রোহী শাহজাদা আলী তেগিন জোট গঠন করেন, সে জোটে তুগ্রুল বে আর চাগরি বে অংশ নেয়নি। আরসালান বে আর আলী তেগিনের এই জোট একত্রিত হয়ে বুখারা শহরে সম্মিলিত আক্রমন পরিচালনা করে এবং তা দখল করে নেয়। বুখারাকে কেন্দ্র করে তারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, পাশাপাশি আলি তেগিন আরসালান ইয়াবগুর মেয়েকে বিয়ে করে, নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেন।

এদিকে জোটে যোগ না দেয়ায় তুগ্রুল বে আর চাগরি বেয়ের উপর আক্রমন চালায় আলী তেগিন, আক্রমন চালিয়ে নূর জেলা দখল করে নেয়। নতুন এ ছোট্র রাষ্ট্রটি কারাখানলী এবং গজনী সম্রাজ্যের রোষের মুখে পরে।আলী তেগিনের হামলায় পিছু হটতে বাধ্য হয় তুগ্রুল বে ও চাগরি বে। তারা সেখান নতুন বসত ভূমি খুজতে থাকে। দুই ভাইয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, তুগ্রুল বে মরুভূমি অঞ্চলে গা ঢাকা দেয়, আর চাগরি বে ৩০০০ হাজার সৈন্য নিয়ে আনাতোলিয়ার দিকে রওনা হন।

১০১৮ সালে চাগরি বে তার বহর নিয়ে আর্মেনীয়দের ভাস্পুরাগান এ সমবেত হয়, এমন অদ্ভূত পরিস্থিতিতে আর্মেনীয়ানরা তাদের সম্রাজ্যের পশ্চিমাংশের দখল হারায়। তুর্কিদের অভিযানে ভীত আর্মেনীয়রা সেখানকার ভূমি ছেড়ে দিয়ে, আনাতোলিয়ার মধ্যাঞ্চলে চলে যেতে থাকে, এরপর চাগরি বে, সাদ্দাদী সম্রাজ্যের দিকে অগ্রসর হলে, ইস্টার্ন রোমান সম্রাজ্যের কমান্ডার ভাসাক পাহলেভুনি, ভাস্পুরাগান সম্রাজ্য দখল করে নেয়। এর কিছুদিন পর চাগরি বে ইস্টার্ন রোমান সম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ন শহর আনির দিকে এগিয়ে আসেন এবং এখানে তিনি ভাসাক পাহলেভুনির বিপক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ন হন, সে যুদ্ধে চাগরি বে এবং তার সৈনিকগন অসীম সাহসীকতার সাথে লড়াই করেন, সে যুদ্ধে রোমান কমান্ডার পাহলেভুনি মারা যায়, যুদ্ধ বিজয়ের পর চাগড়ি বে, বিপুল গনিমত নিয়ে তার ভাই তুগ্রিল বের কাছে ফিরে আসেন, তিনি তার ভাই তুগ্রুল বেকে বলেন, আমরা চাইলে খোরাসান, আজারবাইজান বা পূর্ব আনাতোলিয়ায় আমাদের সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারি, কারন আমি  এমন কোনো বাহিনী দেখেনি, যারা আমাদের পরাজিত করতে পারে।

তুগ্রুল আর চাগরি বে সেখানকার অঘুজ ও তুর্কমেন জনগনকে সাথে নিয়ে, শক্তি বাড়াতে থাকে।  তাদের এই শক্তিবৃদ্ধি তুর্কিস্তান ও খোরাসান অঞ্চলের শাসকদের দৃষ্টিগোচর হবার আগে, চাচা আরসালান ইয়াবগু তাদেরকে পরামর্শ দেন, যেনো তারা মরুভূমি অঞ্চলে গা ঢাকা দিয়ে থাকে। তারাও চাচার কথা অনুসরন করে কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দেয়।

এদিকে গজনী সম্রাজ্যের সুলতান মাহমুদ গজনী আর কারাহানলি সম্রাজ্যের ইউসুফ কাদির খান বুখারা অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আলোচনায় বসেন। সেখানে তারা আলী তেগিনের বিদ্রোহ দমন, তাদের রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্ধারন এবং সেলজুকদেরকে খোরাসান অঞ্চলে নিয়ে যাবার বিষয়ে সম্মত হয়।

এই মিটিং এর কথা আলী তেগিন ও আরসালান ইয়াবগু জানতে পেরে যায়। তারা বুখারা থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নেয়,

এদিকে সুলতান মাহুমুদ গজনী কৌশল খাটিয়ে ঘোষনা দেন, যে তিনি হিন্দুস্তান অর্থাৎ ভারতীয় ভূমিতে জিহাদ পরিচালনা করতে চান, সেজন্য যারা উনার সাথে যোগ দেবে তাদের তিনি পুরস্কৃত করবেন। আরসালান বে তার ছেলে কুতালমিশকে সাথে নিয়ে সুলতান মাহমুদ গজনীর সংগে দেখা করতে যায়।

সুলতান মাহমুদ গজনী, আরসালান ইয়াবগুকে জিজ্ঞেস করেন, হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আপনার সহযোগিতা চাইলে, আপনি কি করতে পারবেন? আরসালান ইয়াবগু জবাব দেন, যদি আমার স্বজাতির কাছে খবর পাঠাই, সেখান থেকে ৩০০০০ ঘোরসওয়ার সৈনিক আসবে, যদি বলকানের পাহাড়গুলোতে খবর পাঠাই তারা আমাকে ১ লাখ ঘোড়সওয়ার সৈনিক পাঠাবে। যদি তুর্কিস্তানের খবর পাঠাই, তবে আসবে দুই লাখ ঘোড়সওয়ার সৈনিক,

জবাব শুনে বিস্মিত সুলতান, আরসালান ইয়াবগু এবং কুতালমিশকে গ্রেফতার করার আদেশ দেন। সুলতান মাহমুদ গজনী তাদের বর্তমান কাশ্মীরের কাছাকাছি একটা দুর্গে বন্দী করে রাখেন। ১০৩০ সালে সুলতান মাহমুদ গজনী মারা যান, আর ১০৩২ সালে আরসালান দুর্গের ভেতর বন্দী অবস্থায় মারা যান। কুতালমিস সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে কিনিক গোত্রে ফিরে আসে।

আরসালান ইয়াবগুর অনুপস্থিতে কিনিক গোত্রের প্রধান হন তার ভাতিজা তুগ্রুল বে । ঐতিহাসিকগন বলেন, উনিই প্রকৃত সেলজুক সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। গজনী সম্রাজ্যের সুলতান মাহমুদ গজনীর মৃত্যুর পর সেখানকার সিঙ্ঘাসনে বসেন সুলতান মাসুদ, ১০৪০ সাল থেকে তুগ্রুল বে তার ভাই চাগরি বেকে সাথে নিয়ে সুলতান মাসুদের দখলে থাকা ভূমি একে একে বিজয় করতে থাকেন। প্রথমে তুগ্রুল বে তুর্কমেনিস্তান অঞ্চল বিজয় করে, সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন।

এরপর খোরাসান বিজয় করে চাগরি বে কে সেখানকার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পারস‍্য অঞ্চলের দিকে অগ্রসন হন। সে ইতিহাস বিস্তারিত বলব পরবর্তী লেখোনীতে।

লেখাগুলো ভিডিও আকারে পেতে কাটাতার প্রোডাকশন ইয়টিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করতে পারেন, আপনাকে ধন্যবাদ।।

No comments

Powered by Blogger.