History of Seljuk Bey | Seljuk Empire History #01 | Katatar Production

সেলজুক সম্রাজ্যের ইতিহাস পর্ব-১


৭৭৬ সালের দিকে কাস্পিয়ান সাগর ও এরাল সাগরের পাশে এক রাষ্ট্রের জন্ম হয়, যার নাম অঘুজ ইয়াবগু। এই রাষ্ট্রে বেশ কিছু গোত্রের জনগন বাস করত, সে সকল গোত্রের মধ্যে এক গোত্রের নাম কিনিক গোত্র, কে জানত খুব শীঘ্রই এই গোত্রের লোকজন এমন এক মুসলিম রাষ্ট্রের জন্ম দিবে, যার সীমানা পূর্বদিকে আফগানিস্তান, আর পশ্চিমদিকে আনাতোলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।।

আসসালামু আলাইকুম ভাই বন্ধুগন, আমি সোহানুর রহমান নাদিম, কাটাতার প্রোডাকশনের এই ভিডিও সিরিজে আপনাদেরকে জানাবো, কিভাবে কিনিক গোত্র একটি সফল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, কিভাবে এই সম্রাজ্যের সুলতানরা সম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটায়? সেলজুক সম্রাজ্যের ফ্যামিলি ট্রি, আর কখনইবা এই সেলজুক সম্রাজ্য বিলীন হতে থাকে?

অগুজ ইয়াবগু রাজ্য টি খাজার খানাতে রাজ্যের অধীনে ছিল, এবং এরা সাধারনত টেংরিজমে বিশ্বাসী ছিল,দুকাক বে যিনি কিনা অঘুজ ইয়াবগু স্টেটের সুবাসি ছিলেন, সুবাসী মানে হচ্ছে, সেনা প্রধান,, তিনি এ রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিদের একজন, তিনি এক সন্তান জন্ম দিয়েছেন, যার নাম তিনি রাখেন সেলজুক বেগ, সেলজুক বেগও তার বাবার মতোই মজবুত ব্যাক্তিত্বের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে, দুকাক বেয়ের মৃত্যুর পর সেলজুক বেগ অঘুজ ইয়াবগু স্টেটের প্রধান সেনাপতি এবং কিনিক গোত্রের গোত্রপ্রধান হন, যার বংশ পরম্পরা অঘুজদের সাথে মিলিত হয়েছে, সেলজুক বেয়ের বাবা দুকাক বে সেলজুক বেকে উন্নত সামরিক ও রাজনৈতিক প্রশিক্ষন দিয়ে দক্ষ করেছিলেন,যার ফলে, তিনি যখন অগুজ ইয়াবগু রাজ্যে কর্মজীবন শুরু করেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে সুখ্যিতি অর্জন করেন । ইয়াবগু এবং সেলজুক বেয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল কিন্তু ইয়াবগু তার স্ত্রীর প্ররোচনায় সেলজুক বেকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন, সেলজুক বে এই পরিকল্পনা আচ করতে পেরে, গোপনে ইয়েঙ্গিকেন্ট থেকে তার গোত্রের মানুষজন নিয়ে জান্দ নামক জায়গায় চলে আসেন/ জান্দ শহরে আসার পর সেলজুক বে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি এটাও জানতেন যে, এখানকার অধীবাসী যারা কিনা অধিকাংশই অঘুজ মুসলিম, তাদের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মুসলিম হতে হবে। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন । তিনি কিনিক গোত্রের নেত্রৃস্থানীয় ব্যাক্তিদের সাথে আলোচনা করেন, তাদের এটি বুঝান যে, আমরা যদি মুসলিম না হই, তবে এখানকার মানুষজন আমাদের গ্রহন করবে না, আমাদের সাথে যোগ দেবেনা এর ফলে কিনিক গোত্রের সকলে টেংগ্রিজম পরিত্যাগ করে একসাথে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম হয়ে যায়। সেলজুক বে তখনকার সুফি সাধকদের সান্নিধ্যে থেকে অতি অল্প সময়ে ইসলামী জীবন ধারায় অভস্ত হয়ে পড়ে। তখন উনার নাম হয়, মালিক-উল গাজী সেলজুক বিন দুকাক ।

তিনি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা শুরু করে দেন।

এদিকে অগুজ ইয়াবগু রাজ্যের টেক্স কালেক্টররা প্রতি বছর একবার জান্দ নামক শহরে আসতেন খাজনা আদায় করার জন্য। এবার যখন আসলেন, তখন জান্দ শহরের শাসক সেলজুক বে ঘোষনা দিলেন কোন অবিশ্বাসী কাফেরদেরকে মুসলিমরা খাজনা দিবেনা। তিনি ইয়াবগু অঘুজ রাজ্যের কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা দিলেন। একদিকে অঘুজ কাফেরের দল অন্যদিএক অঘুজ মুসলিমদের দল, যদিও তারা বংশের দিক থেকে এক ছিল তবু তারা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিল, যার কারন ছিল ইমান ও কুফরের পার্থক্য। জান্দ শহরের মুসলিম জনগন সেলজুক বেয়ের নেত্রৃত্বে জিহাদে স্বত্বঃফূর্তভাবে অংশগ্রহন করে। এবং জানদ শহর কে অঘুজ ইয়াবগু রাজ্য থেকে পৃথক করে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পথচলা শুরু করে। সেই যুদ্ধ সম্পর্কে যদিও খুব বেশি তথ্য জানা যায় না, তবু এতটুকু জানা যায় যে, সে যুদ্ধে সেলজুক বেয়ের বড় ছেলে মিকাইল শহীদ হয়, এবং সেখানকার দুর্গ মুসলিমরা বিজয় করে। সেলজুক বে তার ছেলের মৃত্যুতে অনেক বেশি কষ্ট পায়, মিকাইল মারা যাবার পর, তার এতিম দুই ছেলে তুগ্রুল বে এবং চাগ্রি বে কে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য সেলজুক বে প্রচুর সময় ব্যায় করেন । অন্যদিকে কিপচাক রাজ্য অগুজ ইয়াবগুতে আক্রমন করায়, জান্দ শহরে সেলজুক বেয়ের বিপক্ষে সৈন্য পাঠাতে পারেনি অঘুজ ইয়াবগু।

ন্যায়পড়ায়নতা আর যুদ্ধ জয়ের কৃতিত্বের জন্য সেলজুক বেয়ের সুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পরতে থাকে। তাই ছোট্র  ভূখন্ডের মালিক হয়েও সামানিদের বিরুদ্ধে কারাহানলি রাজ্যের যুদ্ধে সামানিয়রা সেলজুক বেয়ের সমর্থন চায়। সামানিয়রাই সর্বপ্রথম সেলযুক বেয়ের ন্যায়নীতিকে সমর্থন করে। সামানিয়রা কারাহানলিদের বিপরীতে খুবই দুর্বল অবস্থানে ছিল, এই সুযোগে কারাহানলি রাজ্য সামানীয়দের থেকে বেশ কিছু অঞ্চল জয় করে নেয়ে  এবং সেলজুক বেয়ের বিজয় করা জান্দ শহরের দিকে এগোতে থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে, সেলজুক বে সামানিয়দের সাথে এক হয়ে কারহানলিদের বিপক্ষে যুদ্ধ করার ব্যাপারে সম্মত হয়, তিনি তার ছেলে আরসালান ইয়াবগু কে সামানিয়দের সহযোগিতা করার জন্য যুদ্ধে পাঠায়।

আরসালানের সহযোগিতায় সে যুদ্ধে সামানিয়রা জয় লাভ করে, এতে সেলজুক বেয়ের সুখ্যাতি আরো বাড়তে থাকে। এই বিজয়ের মাধ্যমে সামানিয়রা অঘুজদের দক্ষতা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পায়, যুদ্ধের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে সীমানা সুরক্ষার স্বার্থে, সামানিয়রা নূর নামক জেলাটিকে সেলজুক বেকে দিয়ে দেয়, নূর নামক জেলাটি ছিল সামানীয় আর কারাখানিদ দের রাজ্যের সীমানায়, তখন আরসালান ইয়াবগুর নেতৃত্বে অঘুজ জনগনের একটা অংশ নূর নামক জেলায় বসবাস শুরু করেন। সেলজুক বে এবং উনার দুই নাতি তুগ্রুল আর চাগরি বে জান্দ শহরেই থেকে যান। এদিকে সামানিয়দের উপর অতর্কিত আক্রমন চালিয়ে পুরো এলাকা দখলে নেয় সুলতান মাহমুদ গজনভীর গজনী সম্রাজ্য।

তখন সেলজুক বে একা হয়ে পড়েন, ঠিক সে সময় অঘুজ ইয়াবগু রাজ্যের রাজা ইয়াবগু নিজেকে মুসলিম ঘোষনা করেন, উনার নাম হয় তখন আলী খান ইয়াবগু। আলী খান ইয়াবগুর ইসলাম গ্রহনের মাধ্যমে, সেলজুক বেয়ের ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেতে থাকে, এর কিছু দিন পরই সেলজুক বে জান্দ শহরেই মারা যান। উনার মৃত্যুর পর সেখানকার জনগন দু ভাগে ভাগ হয়ে যায়, সেলজুকলুলার আর ইয়াবগুলুলার।

জান্দ শহরে থাকা তুগ্রুল বে আর চাগরি বে বুঝতে পারেন, এই ভূমি বেশিদিন ধতে রাখা সম্ভব হবেনা। সম্পর্ক খুব একটা ভালো না হলেও এদের চাচা আরসালানের কাছে নূর জেলায় চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। 

No comments

Powered by Blogger.