ইসলামে দাসী প্রথা

ইসলামে দাসীর বিধান

সম্পূর্ন না পড়ে এ ব্যাপারে মন্তব্য করবেন না। ইসলামে দাসীর বিধান নিয়ে অমুসলিম এবং ইসলাম বিদ্বেষীরা যেমন ত্যানা পেঁচায়, তেমনি হাল যামানার ইসলামকে কাঁটছাট করা মডারেট মুসলিমরাও ব্যাপারটিকে একেবারেই নাকচ করে দিতে চায়। ব্যাপারটি অনেক স্পর্শকাতর, তাই স্পষ্টভাবে না জেনে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত না। না জানলে বলা উচিত আমি জানি না, তবে কেউ এর সম্পর্কে বললে, তার বিরুদ্ধে বলতে হলে অবশ্যই আপনাকে শরীয়াহ থেকে প্রমাণ দিতে হবে।


মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কমিউনিটির প্রত্যেক লোককে বলা হয় মুহারিব। এদের পুরুষদের রক্ত ও সম্পদ মুসলিমদের জন্য হালাল এবং এদের নারীদের দাসী বানানো মুসলিমদের জন্য হালাল, যতক্ষণ না তারা নিজেদের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে অথবা ইসলাম গ্রহণ করে।


কেন?


যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণা করেছে, তারা মূলত মুসলিমদের জন্য চরম ক্ষতিকর আর ইসলাম এজন্যেই এদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক ব্যবস্থাই নেয়। ইসলাম এদের নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের হত্যা করতে নিষেধ করে। একান্তই নিরুপায় হয়ে গেলে অথবা এদের হত্যা না করলে যদি উম্মাহর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অথবা যুদ্ধে যদি তাদেরকে কুফফাররা মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তাদের হত্যা করলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার, আর আল্লাহই সকলের অন্তরের খবর ভালো জানেন।


১. কুফফারের কাছে আটক মুসলিমদের বিপরীতে বন্দী বিনিময়।
২. অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধবন্দীদের ছেড়ে দেয়া।
৩. ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়া।
৪. তাদের পুরুষদের হত্যা করা আর তাদের দাস-দাসী বানানো।

যুদ্ধ বন্দীদের সাথে চার রকমের আচরণ ইসলাম বৈধতা দেয়। এই সিদ্ধান্ত নিবেন বা সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হবে মুসলিম জামাআতের আমীর কর্তৃক। কেউ তার সমালোচনা করার অধিকার রাখে না, যদি সে ইসলামের সীমারেখার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়। যারা এরপরও সমালোচনা করে, তারা হয় মুনাফিক নয়ত জাহিল। এই চারটার বিপরীতে মুসলিমরা সেই বন্দীদের চিরজীবন আটক করে রাখতে পারে। কিন্তু এটা কোন যৌক্তিক সমাধান না। মুসলিমরা তাদের ভরণ-পোষণের দায়ভার নিয়ে, নিজেদের দায়িত্বকে কোন উপকার ছাড়াই বাড়াতে পারে না। কারণ, ইসলাম বন্দীদের সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ দেয়। বাঁচিয়ে রাখলে তাদের সাথে যথাসম্ভব ভালো আচরণ এবং উত্তমভাবে তাদের পরিচর্যা করতে হবে। আর তাদের হত্যা করতে চাইলেও কোন কষ্ট দেয়া ব্যতীত হত্যা করতে হবে। তাদের অঙ্গ বিকৃত করা যাবে না।

যেহেতু বন্দী নারীদের কোনভাবেই হত্যা করা যাবে না, সেহেতু তাদের ব্যাপারে অবশ্যই ইসলাম যৌক্তিক সমাধান দেয়। কাফিররা যদি তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কোন ব্যবস্থা না করে, তবে হয় তাদের ক্ষমা করে ছড়ে দিতে হবে, নয়ত দাসী বনাতে হবে। তারা যদি আহলুল কিতাব হয় তবে তাদেরকে মুসলিমরা বিবাহ করতে পারবে কিন্তু মুশরিক হলে কখনেই তাদের বিয়ে করতে পারবে না।


কাদের দাসী বানানো যাবে?

কোন যুদ্ধবন্দী কাফির নারী যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তাকে আর দাসী বানানো যাবে না। তাকে মোহর পূর্ণ করে বিবাহ করতে হবে। ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথে তার পূর্বের কাফির স্বামী তার জন্য হারাম হয়ে গেল। এবং যেসব কাফির নারী স্বামী সমেত বন্দী হয়েছে, তাদের স্বামী জীবিত থাকা পর্যন্ত তাদের দাসী বানানো যাবে না, এই জন্যেই যে তার যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য তার স্বামী রয়েছে। শেষ কথাটা থেকে একটা বিষয় প্রতীয়মান হয় যে, যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোটা এই দাসী বানানোর ক্ষেত্রে একটা বড় নিয়ামক। ইসলাম কোন অযৌক্তিক বিধান নয়। ইসলাম এও জানে যে মানুষ রোবট নয়, তার বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, সেগুলো মেটাতে না পারলে অস্বাভাবিকতা এবং ফিতনার সৃষ্টি হয়। এখন যুদ্ধবন্দী নারীগুলোরও যৌন অকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এর কষ্ট থেকে তাদের নিস্তার দেয়ার জন্যেই ইসলাম তাদের দাসী বানানো অথবা আহলুল কিতাব হলে বিয়ে করার সুযোগ রেখেছে। ইসলাম এইসব দাসীর যে পরিমাণ মর্যাদা রেখেছে, বর্তমান সমাজ বিয়ে করা বউদেরও এত মর্যাদা দেয় না। এদেরকে বলা হয় অধিকারভুক্ত দাসী। দাসী আর বিয়ে করা বউয়ের মধ্যে পার্থক্য হল, বউকে মোহর দিতে হবে, দাসীকে মোহর দিতে হবে না। বউকে ত্বালাক দেয়া যায় আর দাসীকে শুধুমাত্র বিক্রি করা যাবে। বউয়ের কিছু অধিকার আপনার উপর আছে কিন্তু দাসীর সেই অধিকারগুলো আপনার উপর নেই, তবে আপনি ভালোবেসে আপনার খুশিমত তাকে দিতেই পারেন। বউয়ের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখা ফরজ কিন্তু দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক রাখা ফরজ না তবে জায়েজ। আপনি দাসীকে অন্যের কাছে বিয়েও দিতে পারবেন, তখন আর তার সাথে যৌন সম্পর্ক রাখার আপনার জন্য হালাল নয়।

দাসীর গর্ভের সন্তান আর বউয়ের গর্ভের সন্তানের মর্যাদা এক, তারা সমানভাবে পিতার সম্পত্তির অংশীদার। অনেকের মতে দাসী সন্তান জন্মাদান করলে, তাকে দিয়ে আর কাজকর্ম করানো বৈধ থাকে না বা তার মর্যাদা একজন বিয়ে করা বউয়ের মত হয়ে যায়। আর দাসীকে বিয়ে করতে চাইলে তাকে স্বাধীন করে মুক্ত করে বিয়ে করতে হবে। মুশরিক হলে ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত বিয়ে করা বৈধ নয়। দাসীকে বিয়ে করা সুন্নাহ।
রাসূলুল্লাহর (স) দুইজন দাসী ছিল, যারা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (স) তাদের বিয়ে করে উম্মুল মু’মিনীনের সন্মান দান করেন। দাসীকে কখনোই কষ্ট দেয়া যাবে না। বউয়ের কারণে যেমন অন্যান্য যেসব নারী আপনার জন্য হারাম হয়ে যাবে, যারা আগে হালাল ছিল, তেমনি দাসীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলেও সেই হিসেবেই তার আত্মীয় নারীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম হয়ে যাবে।
এই দাসী বিষয়ে সুষ্পষ্ট জ্ঞান না থাকায় অমরা সংশয়ে থাকি, মনে হতে পারে যে এটা তো ব্যভিচার। জ্বি এটা খুব স্পর্শকাতর ব্যাপার। অসতর্ক থাকলে ব্যভিচারও হয়ে যেতে পারে। কেননা, সাহাবীদের আমলে একলোক এক যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে যৌনক্রিয়ায় রত হয়। পরে ধরা খেলে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে তুমি কেন এমন করেছো, অথচ তাকে এখনো তোমার অধীনস্থ করা হয় নি। সে উত্তর দেয় যে, সে নিজেকে আর সংযত করতে পারছিল না।
পরে তখন অমীরুল মু’মিনীন উমারের (রা) কাছে বিস্তারিত জানিয়ে এর বিধান এবং ফয়সালা চেয়ে চিঠি লেখা হয়। উমার (রা) বলেন যে তার উপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। কারণ, সে এমন নারীর সাথে লিপ্ত হয়েছে যে তার অধীনস্থ না। পরবর্তিতে ওই লোকের শাস্তি প্রয়োগের আগেই কোন কারণে তার মৃত্যু ঘটে। মূলত কোন মেয়েকে বিয়ে করার আগ পর্যন্ত যেমন কারো জন্য সেই মেয়ে বৈধ না, তেমনি আমীর যতক্ষণ না কোন মেয়েকে কোন মুজাহিদের অধীনস্থ করে দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত ওই মেয়ে কারো জন্য বৈধ না এবং তার দিকে তাকিয়ে থাকাও বৈধ নয়। আমীর স্বীয় বিচক্ষণতার মাধ্যমে মুজাহিদদের মধ্যে যুদ্ধন্দী নারীদের বন্টন করবেন, যেনম মুজাহিদরা তাদের অধীনস্থ দাসীদের ভরণ-পোষণ থেকে শুরু করে সকল রকম আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে পারে এবং সাথে সাথে যেন নিজেরাও উপকৃত হয়।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে ইসলামে খুব মানবিকতা পূর্ণ বিধান দেয়া আছে। পূর্বে এবং পরে ইসলাম বহির্ভূত সকল কমিউনিটিই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের নারীদের উপর এবং যুদ্ধবন্দীদের উপর নিদারুণ নির্যাতন চালিয়ে আসছে।
ধর্ষণ, গণধর্ষণ, গোপানাঙ্গে আঘাত, শ্লীলতাহানী, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা অথবা এমন কোন পাশবিকতাটা নেই যা তারা করে না। ইসলাম এজন্যেই যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে সুন্দর ইধান দেয়, যেখানে মুজাহিদরা যুদ্ধবন্দীদের ধর্ষণ করবে না, হয় তাদের আত্মীয়দের কাছে ফিরিয়ে দিবে নতুবা নিজেরাই তাদের দায়িত্ব নিয়ে তাদের ভালোবেসেই জীবন অতিবাহিত করবে।
দাসীদের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখা কি ব্যভিচার?
অবশ্যই না, কারণ তাহলে সাহাবীদের (রা) ব্যভিচারী বলার মত অপবাদ দিতে হবে। মূলত আমরা জেনে আসছি যে বিয়ে করা বউকে ছাড়া অন্য ননমাহরাম নারীর দিকে তাকানোও জায়েজ নেই, আবার মুশরিকদের বিয়ে করাও হারাম, সেখানে তাদের সাথে কিভাবে যৌন সম্পর্কের মত সম্পর্ক সৃষ্টিকে ইসলাম সমর্থন দিতে পারে?
হ্যাঁ দিতে পারে, কারণ আমরা সাহাবীদের (রা) জীবনে সেট দেখতে পাই এবং কুরআনেও দেখতে পাই যে অধিকারভুক্ত দাসীদের কথা। উল্লেখ্য প্রত্যেক মুসলিম নারী স্বাধীন, তাদের কখনোই দাসী বানানো যাবে না। দাসী হবে কেবল তারা, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং করছে। তাদের নারীদের দাসী বানানো জায়েজ এবং আমীর নির্ধারণ করে দিলে, তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখাও জায়েজ।
তবে ইসলামের এই বিধানকে বিকৃত করে শিয়ারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে অন্যান্য কাফির, জালিমদের মত ধর্ষণ করাকেও সমর্থন দেয় এবং এটাকে বৈধ মনে করে। বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সৈন্যদলও যুদ্ধে প্রতিপক্ষের নারীদের ধর্ষণ এবং গণধর্ষণের মত ন্যাক্কার কাজ করে থাকে।
যেমন ভারতীয়রা কাশ্মীরি মুসলিমাদের উপর, আরকানের মুসলিমাদের উপর বার্মিজ আর্মী এবং বাংলাদেশিদের উপর তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনী, বসনিয়ার মুসলিমাদের উপর সার্বিয়ান বাহিনী, চেচনিয়া, আফগান মুসলিমাদের উপর রাশান বাহিনী। ইরাক, আফগান, পাকিস্তান মুসলিমাদের উপর মার্কিন বাহিনী, আফ্রিকান দেশগুলোর উপর ফ্রেঞ্চ সহ জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন বাহিনী, চীনা নারীদের উপর জাপানী বাহিনী, এমন কি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি নারীদের উপর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীসহ বিশ্বের যেকোন যুদ্ধে কত শত নারীকে যে ধর্ষণ, গণধর্ষণ করা হয়েছে, ইসলামে তা সম্পূর্ণ হারাম।
ইসলামের নাম ভাঙিয়ে এইসব করার কোন সুযোগ নেই। ইসলাম কেবল সেসব যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে যৌন সম্পর্ককে হালাল করে, যাদের আমীরের মাধ্যমে আপনার উপর দায়িত্ব চাপানো হয়। দায়িত্ব ছাড়া কোন অধিকারই নেই।

দাস-দাসীর প্রথা!

ইসলাম পূর্ব  যুগ থেকেই দুনিয়ার সর্বত্র এবং প্রায় সকল জাতীর মধ্যেই দাস-দাসীর প্রথা চালু ছিল। মূলতঃ যখন থেকে দুনিয়ায়যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়, তখন থেকেই প্রথাটির আবির্ভাব হয়। প্রথমে তো যুদ্ধবন্দীদের নির্দয়ভাবে হত্যা করে দেওয়া হতো। এরপর কিছুটা শিথিল হয়ে শুধু যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে যাদেরকে হুমকি ভাবা হতো, তাদেরকে হত্যা করে দেওয়া হতো। আর দূর্বল, মহিলা ও শিশুদের দাস-দাসী বানিয়ে রাখা হতো। সারকথা দাস-দাসীর প্রথা হলো বিজিতদের ওপর বিজয় বা কর্তৃত্ব লাভের একটি রূপ। ইসলাম বহু যুগ আগ থেকে চলে আসা প্রথাটিকে একেবারে নিষিদ্ধ করে দেয়নি। কেননা, প্রথাটি সম্পূর্ণ মানবতা বিরোধী নয়। যার ব্যাখ্যা হলো যে, মানুষ বিভিন্নভাবে মানুষের পরাধীনতা শিকার করে থাকে। মানুষের মধ্যে দেখা যায় কেউ মালিক কেউ চাকর, কেউ পরিচালক কেউ পরিচালিত, কেউ সেবক কেউ সেবিত। আল্লাহ তাআলাই পার্থক্য দ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এটা তাঁর সৃষ্টির রহস্য।  সে জন্য ইসলাম এসে এই প্রথাকে রহিত করেনি। কেননা, এটি একটি পরাধীনতার রূপ। তবে এব্যবস্থার মধ্যে যে সকল দিক মানবতা বিরোধী ছিল তা নিষেধ করেছে। বিভিন্ন হাদীস এর প্রমাণ বহন করে।  যেমন- হাদীসে দাস-দাসীকে অন্যায়ভাবে প্রহার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের খাওয়া-দাওয়াসহ সকল মানবীয় প্রয়োজন যথাযথ পন্থায় পূরণের আদেশ দিয়েছে। আর দাসীকে স্ত্রী (উম্মে ওয়ালাদ) হিসেবে ব্যবহার করা তো হলো অনেকাংশে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া এটি নি:সন্দেহে দোষণীয় নয়।


দাস-দাসী কি দোষণীয়!

বর্তমানে মানবতা রক্ষার তথাকথিত দাবীদার  যারা ইসলাম স্বীকৃত গোলামী প্রথা নিয়ে সমালোচনা করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা প্রয়োজন যে, ইসলামের গোলামী প্রথা পাশ্চাত্যের মহাজনী প্রথার চেয়ে অনেক ভাল। কেননা, পূর্বে বর্ণনা করে আসা হয়েছে যে, ইসলাম অনেক যৌক্তিক কারণে তা নিষিদ্ধ না করলেও মানুষের অধিকারকে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। যারা এই বলে গর্ব করে আমরা গোলামী প্রথাকে দূর করেছি। নি:সন্দেহে তারা শুধুগোলামীর শব্দটা দূর করেছে। মানুষের অধিকার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করেনি।
বর্তমানে মানবতা রক্ষার তথাকথিত দাবীদার  যারা ইসলাম স্বীকৃত গোলামী প্রথা নিয়ে সমালোচনা করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা প্রয়োজন যে, ইসলামের গোলামী প্রথা পাশ্চাত্যের মহাজনী প্রথার চেয়ে অনেক ভাল। কেননা, পূর্বে বর্ণনা করে আসা হয়েছে যে, ইসলাম অনেক যৌক্তিক কারণে তা নিষিদ্ধ না করলেও মানুষের অধিকারকে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। যারা এই বলে গর্ব করে আমরা গোলামী প্রথাকে দূর করেছি। নি:সন্দেহে তারা শুধুগোলামীর শব্দটা দূর করেছে। মানুষের অধিকার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করেনি।
উল্লেখ্য, ইসলাম প্রথাটি শিথিল করার জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যাতে ধীরেধীরে   এটি বন্ধ হয়ে যায়। যেমন হাদীসে গোলাম আযাদের অনেক ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে। একটি হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

عن أبي هريرة  : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال  من أعتق رقبة مسلمة أعتق الله بكل عضو منه عضوا من النار حتى فرجه بفرجه
যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান গোলাম আযাদ করবে, আল্লাহ তাআলা সেই গোলামের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আযাদকারীর একেক অঙ্গকে জাহান্নাম থেকে মু্ক্তি দান করবেন। বুখারী:১/৩৪৪
এমনিভাবে অমুসলিম গোলাম আযাদের অনেক ফযিলত এসেছে। এসব ফযিলত লাভের আশায় অনেক সাহাবীই গোলাম আযাদ করেছেন যেমন- হযরত আবু বকর রাযি.-এর আযাদকৃত গোলামের সংখ্যা ৬৩, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাযি.-এর ৩০, হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাযি.-এর ২০০, হযরত আব্বাস রাযি.-এর ৭০, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি.-এর ১০০০, হযরত আয়েশা রাযি.-এর ৬৯, হযরত উসমান রাযি.-প্রতি জুমাআয় একজনকে আযাদ করতেন।
১. وَلَا تُكْرِهُوا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَاءِ إِنْ أَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِتَبْتَغُوا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَنْ يُكْرِهْهُنَّ
অনুবাদ: দাসীদের দ্বারা ব্যভিচার করিয়ে অর্থ উপার্জনকে নিষিদ্ধ করে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে অপকর্ম করতে বাধ্য করো না (তাদেরকে কোনো ধরনের অপকর্ম করতে দিয়োনা) সুরা নুর: ৩৩
২.
قال: رأيت أبا ذر الغفاري رضي الله عنه وعليه حلة، وعلى غلامه حلة، فسألناه عن ذلك، فقال:     إني ساببت رجلا، فشكاني إلى النبي صلى الله عليه وسلم، فقال لي النبي صلى الله عليه وسلم:    «أعيرته بأمه»، ثم قال: «إن إخوانكم خولكم جعلهم الله تحت أيديكم، فمن كان أخوه تحت يدهفليطعمه مما يأكل، وليلبسه مما يلبس، ولا تكلفوهم ما يغلبهم، فإن كلفتموهم ما يغلبهم  أعينوهم»
গোলামদের সাথে ইসলাম পূর্ব যুগে চতুষ্পদ জন্তুর মত আচরণ করা হতো, সেটা নিষিদ্ধ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এসব গোলাম-বাদীরা তোমাদের ভাই-বোন আল্লাহ তাআলাই তাদেরকে তোমাদের অধিনস্ত করেছেন। তাই তোমাদের জন্য আবশ্যক তাদের সাথে সমতা রক্ষা করা। তোমরা যা খাও তাদেরকে  তাই খাওয়াও। তাদের সাধ্যের বাইরে তাদের থেকে কোনো খেদমত নিওনা। এবং কঠিন কাজ দিলে নিজেরাও তাদের সহযোগিতা কর। বুখারী:১/৩৪৬, আবু দাউদ:৭০২,
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
قال أتيت ابن عمر وقد أعتق مملوكا – قال – فأخذ من الأرض عودا أو شيئا فقال ما فيه من الأجر ما يسوى هذا إلا أنى سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول « من لطم مملوكه أو ضربه فكفارته أن يعتقه ».
অন্যায়ভাবে যে ব্যক্তি গোলামকে মারপিট করবে বা থাপ্পড় দিবে, এর কাফ্ফারা হলো সেই গোলামকে আযাদ করে দেওয়া। আবু দাউদ:৭০২
قال: سمعت عبد الله بن عمر يقول: جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم، فقال: يا رسول الله، كم نعفو عن الخادم؟ فصمت، ثم أعاد عليه الكلام، فصمت، فلما كان في الثالثة، قال: «اعفوا عنه في كل يوم سبعين مرة»
এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, গোলামের অপরাধ কতবার ক্ষমা করব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, দৈনিক সত্তর বার ক্ষমা করবে। আবু দাউদ:৭০২

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ حُضِرَ جَعَلَ يَقُولُ الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ فَجَعَلَ يَتَكَلَّمُ بِهَا وَمَا يَكَادُ يَفِيضُ بِهَا لِسَانُهُ
সর্বোপরি মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে যে দুটি বিষয়ে  সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তা হচ্ছে, নামাজ এবং গোলামের হক্ব। আবু দাউদ:৭০১,
এগুলো তো হচ্ছে মৌলিক বিধান। এছাড়াও এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে গোলাম আযাদ বাধ্য করে দেওয়া হয়েছে যেমন-
১. গোলাম যদি এমন কারো মালিকানায় আসে যিনি তার কোনো আপন আত্মীয়, তা হলে এমনিতেই আযাদ হয়ে যায়। মনিব থেকে যে দাসি বাচ্চাজন্ম দিবে, সে দাসী মনিবের মৃত্যুর পর আযাদ হয়ে যাবে। আর দাস-দাসীর বিধান এখনো  রহিত হয়নি বহাল রয়েছে।। যদি দুনিয়ার কোথাও আবারও সেই সব কারণ পাওয়া যায় সেখানে পুনরায় দাস-দাসীর বিধান প্রযোজ্য হবে। 
এখন প্রশ্ন হলো, বাসায় কাজের মেয়ে রাখা এখন যেন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে গরীব ঘরের ছোট মেয়েদের নিয়োগ দেয়া হয়। কাজের মেয়েটি পুরো পরিবারের কাজ করে অথচ ভালো খাবার, থাকার ঘর এবং পোশাক থেকে বঞ্চিত হয়। এটা সবারই জানান। বাসায় কাজকর্মে সহায়তার জন্য কাজের মেয়ে রাখার ব্যাপারে শরী’য়াতের বিধান কি? আবার অনেকে তাদেরকে ইসলামে প্রচলিত দাস-দাসি মনে করে। একটা কি সম্ভব? আসলেই কি কাজের মেয়েটি দাসী? তার সাথে যৌনাচার করা তাকে স্ত্রীর মত ব্যবহার করা ইসলামে কি বৈধ?
উত্তর তো আপনার কাছেই আছে! নিজেই চিন্তা করুন, ইসলাম যে মানুষগুলোকে দাস-দাসী বলেছেন, বর্তমানে আমাদের বাসা-বাড়িতে যে নারী-পুরুষ কাজ করে তারা কি সেরকম। আমি আপনি কি যুদ্ধ করে তাদেরকে অর্জন করেছি? যদি এই কাজের নারী-পুরুষগুলো ইসলামের সেই দাস-দাসী হয়, তা হলে আপনি আমি যে অফিসে বা যার অধিনে কাজ করি! সে হিসেবে আমিও তো দাস বা দাসী! এটাকি আপনি মেনে নিবেন? যদি উত্তর না হয়, তা হলে কেন আপনার মধ্যে এ প্রবণতা যে বাসা-বাড়িতে যে মেয়েটি কাজ করবে সে আমার দাসি! কোন উত্তর আছে? এখন আসি, বাসায় কাজের মেয়ে রাখার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে! বাসার কাজের জন্য কাজের মেয়ে রাখতে শরী’য়াতে কোন বাধা নেই। তবে শর্ত হচ্ছে বালেগা হলে বাড়ীর পুরুষ সদস্যদের তার সামনে পূর্ণরূপে পর্দা করতে হবে এবং মনিবের সাথে তার স্ত্রী কিংবা মা-বোন কাউকে থাকতে হবে। কারণ পর-পুরুষের সাথে গায়রে মাহরাম নারীর একাকী হওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।

No comments

Powered by Blogger.