আলেম মাওঃ সাদ সাহেব ও কিছু কথা -সোহানুর রহমান

মাওলানা সাদ কান্ধলভী (দা)
দ্বীন ও ইসলামের দাওয়াতি কাজকে এগিয়ে নিতে মাওলানা ইলিয়াছ শাহ (রাহ.) দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদ থেকে তাবলিগের কাজ শুরু করেছিলেন। মাওলানা ইলিয়াছ (রাহ.)-এর ছেলে মাওলানা হারুন (রাহ., তার ছেলে হলেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী।দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বী সাদ সাহেব নাকি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল ও নবুয়ত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।তাদের মতে,উনার এ সব আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের কাছে বিতর্কিত হয়েছেন। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যগুলো ‘সা’আদ সাহেবের আসল রূপ’ নামে একটি ছোট্ট বই আকারে প্রকাশ করেছেন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস, তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বী এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে ভারত সফরকারী ৫ সদস্যের অন্যতম মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক।তাদের মতে, তাঁর লিখিত ‘মাওলানা সাদ সাহেবের আপত্তিকর’ কুরআন-হাদিস বিরোধী বক্তব্যগুলো এবং কিছু জবাব তুলে ধরা হলো-
> ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকাঃ সাদ সাহেব বলেছেন ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য, এতে কোরআনের বা হাদীসের বিরোধীতো কোনো কথা নেই। যারা বলেন, বর্তমানের তাবলীগ ইলিয়াস (র)তাবলীগ নয়। তাদের জন্য বলি, ইলিয়াস (র) কি কোনোদিন ও গনতন্ত্রের জন্য মেহনত করেছেন?তাছাড়া গনতন্ত্র হারাম হারাম হারাম। এটা সকল মোল্লা মৌলিবীরাও স্বীকার করে থাকেন।কিন্তু ভোট দেয়া থেকে যদি বিরত থাকে তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহের। আর এরাই মূলত সাদ সাহেবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, যা আলোচনার মাধ্যমেও সমাধান সম্ভব ছিল।
>> ভোটের সময় চিহ্ন হিসাবে (আঙুলে) যে রং লাগানো হয়, তার কারণে নামাজ হয় না। তাই ভোট না দেয়া উচিত।
এটা ফিকহী মাসয়ালা। আমরা জানি সাদ সাহেব একজন আলেমে দ্বীন। সুতরাং তিনি মাসয়ালা বর্ননা করতেই পারেন। মাঝে মাঝে ভাবি যদি ইমাম আবু হানিফা (র) বেচে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি সাদ সাহেবের বক্তব্যকে সমর্থন করতেন।কারন এটা স্পষ্ট যে, অযূ করতে নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গে পানি পৌছতে হয়। ভোটের পরে আংগুলে যে কালি ব্যাবহার হয় সেটা কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়এবং এটি চামড়ার উপরে এক ধরনের সূক্ষ পর্দা সৃষ্টি করে বিধায়, সেখানে পানি পৌছাতে পারেনা।পানি পৌছাতে না পারায় অযূ হবেন। অযূ না হলে নামাজ ও হবেনা।সুতরাং, সাদ সাহেব আপনি ঠিকই বলেছেন।আমি এই মাস আলা দেখে বরংচ সাদ সাহেবের এলেমের প্রশংসা না করে পারছিনা। আল্লাহ উনাকে উত্তম জাযা প্রদান করুক।এবং পেট পূজারী দরবারী আলেম, যারা নিজ স্বার্থ হাসিলের জন কোরআন হাদীসের ভূল ব্যাখ্যা দিচ্ছে, আল্লাহ তাদের হেদায়াত দান করুন।
>> বিভিন্ন আয়াতে্র ব্যাখ্যার সময় তিনি বলেন, মুফাসসিরিন এই আয়াতের কোনো এক তাফসির করেছেন, ওলামা কোনো এক তাফসির করে থাকেন, কিন্তু আমি এই তাফসির এইভাবে করে থাকি। এটা শুনো। এটাই সঠিক তাফসির!
এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক মানবীয় বৈশিষ্ট্য যে, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মত , পথকে সঠিক বলে মনে করেন।সুতরাং সাদ সাহেব একজন আলেম হিসেবে তাফসির করতেই পারেন, এবং নিজেরটা সঠিক বলে


> ইসলাম ও ওলামাদের বিরোধীতা
সম্পূর্ন ভিত্তিহীন অভিযোগ। এই লেখাটা দেখে আমি বড়ই অবাক হয়েছিলাম,
একজন মুসলিম কিভাবে আরেক মুসলিমের বিরুদ্ধে এতো বড় অপবাদ দিতে পারে, আমার বুঝে আসেনা।ওলামাদের বিরোধীতা অনি কখনোই করেননি, বিরোধিতা করেছেন তাদের বিরিদ্ধে, যারা ধর্মের লেবাছ পরে, ধর্মকে পুজি করে, ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনীতি করে, পেটনীতি করে।তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা ফরযে আইন।
>> ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম এবং পকেটে ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রেখে নামাজ হয় না। যে আলেমগণ ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখাকে ‘জায়েজ’ বলেন, তারা ‘ওলামায়ে ছু’। বার বার কসম খেয়ে তিনি বলেন, তারা হলো ‘ওলামায়ে ছু’। এমন আলেমরা হলো গাধা! গাধা! গাধা!এই মতামতে পক্ষেও শক্ত এবং মজবুত দলীল উপস্থাপন সম্ভব।আমরা জানি ইসলাম ধর্মে, তৈলচিত্র, বা ফটোগ্রাফি হারাম।উনি বুঝাতে চেয়েছেন যেই মোবাইলে ক্যমেরা আছে,সেই মোবাইল পিকচার উঠানোর জন্যই মূলত কেনা হয়। যা হারাম। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাদ সাহেব বলেছেন ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম।
> মাদরাসা মসজিদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপঃ
ইমামতি করে বেতন নেওয়ার পক্ষে অনেকের যুক্তি হলো- ইমাম সাহেবকে যদি নিজের পরিবারের ভরন পোষণের দায়িত্ব নিজেকে বহন করতে হয়, তাহলে তাকে রিজিকের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে ব্যস্ত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে তিনি আর সংশ্লিষ্ট মসজিদটিতে নিয়মিত ইমামতি করতে সক্ষম হবেন না।এখানে আমার কথা হচ্ছে, ইমাম সাহেব যে স্থানে কাজ করবেন সেখানেও তো কোনো না কোনো মসজিদ আছে, সেখানে নামাজ পড়ালেই তো চলে। আর যদি সেখানে তাকে কেউ নামাজের ইমাম হিসেবে গ্রহণ করতে না চায় তাতে তো তার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না। দুনিয়াবী ক্ষতিও হচ্ছে না, আবার পরকালীন ক্ষতিও হচ্ছে না। কারণ তাকে ইমামতি করাতেই হবে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মুসল্লিরা যাকে তাদের ইমাম হিসেবে মেনে নিবে কেবল তারই ঈমানী বাধ্যবাধকতা থাকে ঐ মুসল্লিদের নামাজে ইমামতি করার। মুসল্লিরা যদি কোনো কোট-টাই পরিহিত ব্যক্তিকে তাদের ইমামতির দায়িত্ব অর্পন করে তাহলে তিনিই ইমামতি করাবেন- এটাই ইসলামের নীতি।
>> কুরআন শরিফ শিখিয়ে বেতন গ্রহণ করেন, তাদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ। যে ইমাম এবং শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন, বেশ্যারা তাদের আগে জান্নাতে যাবে!
সূরা ছোয়াদ ৮৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ

বলুন, আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না আর আমি লৌকিকতাকারীও নই।
Say: "No reward do I ask of you for this (Qur'an), nor am I a pretender.


সূরা তাওবাহ এর ৩৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
O ye who believe! there are indeed many among the priests and anchorites, who in Falsehood devour the substance of men and hinder (them) from the way of Allah. And there are those who bury gold and silver and spend it not in the way of Allah. announce unto them a most grievous penalty
সূরা বাকারার ৪১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَآمِنُواْ بِمَا أَنزَلْتُ مُصَدِّقاً لِّمَا مَعَكُمْ وَلاَ تَكُونُواْ أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ وَلاَ تَشْتَرُواْ بِآيَاتِي ثَمَناً قَلِيلاً وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ।
And believe in what I reveal, confirming the revelation which is with you, and be not the first to reject Faith therein, nor sell My Signs for a small price; and fear Me, and Me alone.
সুরা বাকারার ১৭৪,১৭৫ এবং১৭৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أُولَـئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
Those who conceal Allah.s revelations in the Book, and purchase for them a miserable profit,- they swallow into themselves naught but Fire; Allah will not address them on the Day of Resurrection. Nor purify them: Grievous will be their penalty.

১৭৫ أُولَـئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُاْ الضَّلاَلَةَ بِالْهُدَى وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ فَمَآ أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ
এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী।
They are the ones who buy Error in place of Guidance and Torment in place of Forgiveness. Ah! what boldness (They show) for the Fire!


(176 ذَلِكَ بِأَنَّ اللّهَ نَزَّلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُواْ فِي الْكِتَابِ لَفِي شِقَاقٍ بَعِيدٍ
আর এটা এজন্যে যে, আল্লাহ নাযিল করেছেন সত্যপূর্ণ কিতাব। আর যারা কেতাবের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে নিশ্চয়ই তারা জেদের বশবর্তী হয়ে অনেক দূরে চলে গেছে


>> মাদরাসাগুলোতে জাকাত না দেয়া হোক। মাদরাসায় জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না।
হ্যা ঠিকইতো।আল্লাহ পাকই ঠিক করে দিয়েছে কাকে যাকাত দেয়া যাবে। যাকাত কেবল নি:স্ব, অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আলস্নাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় (আল কুরআন, ৯:৬০)। এ খাতের বাইরে অন্য কোন খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। নিম্নে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত উলেস্নখিত ৮টি খাতের বর্ণনা দেয়া হলো।
যাকাত বন্টনের নির্ধারিত ৮টি খাতের বিবরণ:

প্রথম খাতঃ ফকীর- ফকীর হলো সেই ব্যক্তি যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। যে ব্যক্তি রিক্তহস্ত, অভাব মেটানোর যোগ্য সম্পদ নেই, ভিক্ষুক হোক বা না হোক, এরাই ফকীর। যে সকল স্বল্প সামর্থ্যের দরিদ্র মুসলমান যথাসাধ্য চেষ্ট করা সত্ত্বেও বা দৈহিক অক্ষমতাহেতু প্রাত্যহিক ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারে না, তারাই ফকীর। কারও মতে যার কাছে একবেলা বা একদিনের খাবার আছে সে ফকীর।
দ্বিতীয় খাতঃ মিসকীন- মিসকীন সেই ব্যক্তি যার কিছুই নেই, যার কাছে একবেলা খাবারও নেই। যে সব লোকের অবস্থা এমন খারাপ যে, পরের নিকট সওয়াল করতে বাধ্য হয়, নিজের পেটের আহারও যারা যোগাতে পারে না, তারা মিসকীন। মিসকীন হলো যার কিছুই নেই, সুতরাং যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ফকীর বা মিসকীন যাকেই যাকাত দেয়া হবে, সে যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয়।
তৃতীয় খাতঃ আমেলীন- ইসলামী সরকারের পক্ষে লোকদের কাছ থেকে যাকাত, উসর প্রভৃতি আদায় করে বায়তুল মালে জমা প্রদান, সংরক্ষণ ও বন্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এদের পারিশ্রমিক যাকাতের খাত থেকেই আদায় করা যাবে। কুরআনে বর্ণিত আটটি খাতের মধ্যে এ একটি খাতই এমন, যেখানে সংগৃহীত যাকাতের অর্থ থেকেই পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এ খাতের বৈশিষ্ট্য হলো এতে ফকীর বা মিসকীন হওয়া শর্ত নয়। পক্ষান্তরে, অবশিষ্ট ৫টি খাতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ দূরীকরণে যাকাত আদায় শর্ত।
চতুর্থ খাতঃ মুআলস্নাফাতুল কুলুব (চিত্ত জয় করার জন্য)- নতুন মুসলিম যার ঈমান এখনও পরিপক্ক হয়নি অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক অমুসলিম। যাদের চিত্ত (দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করে) আকর্ষণ ও উৎসাহিত করণ আবশ্যকীয় মনে করে যাকাত দান করা হয়, যাতে তাদের ঈমান পরিপক্ক হয়। এ খাতের আওতায় দুঃস্থ নওমুসলিম ব্যক্তিদের যাকাত প্রদানের ব্যাপারে ফকিহগণ অভিমত প্রদান করেছেন।
পঞ্চম খাতঃ ক্রীতদাস/বন্দী মুক্তি- এ খাতে ক্রীতদাস-দাসী/বন্দী মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। অন্যায়ভাবে কোন নিঃস্ব ও অসহায় ব্যক্তি বন্দী হলে তাকেও মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।
ষষ্ঠ খাতঃ ঋণগ্রস্থ- এ ধরণের ব্যক্তিকে তার ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত দেয়ার শর্ত হচ্ছে- সেই ঋণগ্রস্থের কাছে ঋণ পরিশোধ পরিমাণ সম্পদ না থাকা। আবার কোন ইমাম এ শর্তারোপও করেছেন যে, সে ঋণ যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য- যেমন মদ কিংবা না- জায়েয প্রথা অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য ব্যয় না করে।
সপ্তম খাতঃ আলস্নাহর পথে- সম্বলহীন মুজাহিদের যুদ্ধাস্ত্র/সরঞ্জাম উপকরণ সংগ্রহ এবং নিঃস্ব ও অসহায় গরীব দ্বীনি শিক্ষারত শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে যাকাত প্রদান করা যাবে। এ ছাড়াও ইসলামের মাহাত্ম ও গৌরব প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে যারা জীবিকা অর্জনের অবসর পান না এবং যে আলিমগণ দ্বীনি শিক্ষাদানের কাজে ব্যাপৃত থাকায় জীবিকা অর্জনের অবসর পান না। তারা অসচ্ছল হলে সর্বসম্মতভাবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া যাবে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় বর্ণিত আছে যে, ‘‘যাকাত এই সমসত্ম লোকের জন্য যারা আলস্নাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফেরা করতে পারে না, যাচঞা না করার জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত বলে মনে করে।
অষ্টম খাতঃ অসহায় মুসাফির- যে সমসত্ম মুসাফির অর্থ কষ্টে নিপতিত তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পুরণ হওয়ার মত এবং বাড়ী ফিরে আসতে পারে এমন পরিমাণ অর্থ যাকাত থেকে প্রদান করা যায়।>> মাওলানা সাদ সাহেব আযমগড়ের ইজতেমায় এবং অন্যান্য ইজতেমায় একাধিকবার সুন্নাতকে ‘৩ প্রকার’ বলে বর্ণনা করেছেন- ইবাদতের সুন্নাত, দাওয়াতের সুন্নাত এবং আচার-অভ্যাসের সুন্নাত।
এই কথায় যদি সমস্যা হয়, তাহলে আপনারা যে বেদয়াতের শ্রেনীবিন্যাস করলেন কেন? এগুলূকি হাদিস দ্বারা সমর্থিত?
> নবিওয়ালা কাজের বিরোধীতাঃ বছরের পর বছর নিজের খেয়ে নিজের পরে, অন্যের মঙ্গলের জন্য যিনি করে রাতকে দিন করছেন, দিনকে রাত করছেন নবীওয়ালা কাজের আঞ্জাম দিয়ে আসছেন, তিনিই নাকি নবীওয়ালা কাজের বিরুধীতা করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে এত অভিযোগ এতদিন ছিল কোথায়? তিনিতো এই সমস্ত কথা আরো অনেক আগেই বলেছেন। মূলত এখন সাদ সাহেবের বিরুদ্ধে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে তখন, যখন ধর্মের নামে রাজনীতির বিপক্ষে বলেছেন। বিরুধীদের দু ভাগে ভাগ করা যায়। এক ১।ইন্দনদাতা,আর ২।যোগানদাতা। ইন্দনদাতারা, খুবই কুটকৌশলী। তারা তাবলীগ জামাতের ভিতরেও একদলকে রাজনীতিময় কথা বার্তা বলতে উৎসাহ দিয়ে থাকে। এরা মূলত সাধারন মানুষ্বএর ধর্ম বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিরবাচনী ফায়দা হাসিল করতে চায়। নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে, দরকষাকষি চলছে,কোন দল কোন জোটে থাকবে? কাকে কয়টি আসন দেয়া হবে এই সব নিয়ে চলছে হিসাব নিকাশ।ঠিক এর আগ মূহূর্তে হুজুরদের দাপট আর শক্তি প্রদর্শন খুব প্রয়োজন হয়ে পরেছিল । আর সেটা বাস্তবায়নের জন্য, মিডীয়ার লাইটিং এ আসার জন্য, ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে এই নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ের ইজতেমাকেই তাদের বেছে নিতে হলো।
বলে রাখা ভালো, ইসলামেও রাষ্ট্রনীতি আছে, তবে সেই রাষ্ট্র ব্যাবস্থার নাম হচ্ছে খিলাফত। আর মাওলানা সাদ সাহেব খিলাফতীয় রাষ্ট্রব্যাবস্থাকে সমর্থন করেন।আর এই রাষ্ট্র নীতিতে কোনো মিটিং মিছিল চলেনা, হরতাল চলেনা,বোমাবাজী চলেনা, হাত পায়ের রগ কেতে ফেলা চলেনা,আত্মস্বীকৃত ঘুষখোরদের মন্ত্রীত্বে রাখা হয়না।সর্বপরী গোপন ভোট হয় না। গোপনে মতামত প্রকাশ মুনাফেকী। সেইজন্য ইসলামী শরয়ী হুকুম হলো ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকা। ভুল বুঝলে চলবে না, ইসলাম নির্বাচনের বিপক্ষে নয়। বরংচ যারা তাবলীগ জামাত সম্পর্কে সামান্যতম হলেও জ্ঞান রাখেন তারা জানেন যে,পরামর্শ সভায় প্রত্যক্ষ এবং মৌখিক সমর্থনের মাধ্যমে তাবলীগ জামাতের আমীর নির্বাচন করা হয়। এবং প্রত্যেক সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে আমীর সাহেব ওনার কার্য-পরিচালনা করে, থাকেন।প্রতিটি গ্রাম থেকে শুরু করে, ইউনিয়ন,থানা,উপজেলা,জেলা, জাতীয় এবং বৈশ্বিক পর্যায়েও একইভাবে আমির নির্বাচন করা হয়। যেই নির্বাচনে অবৈধ কোন প্রভাব থাকেনা,থাকেনা কোন টাকার লেনদেন,বা লবিং ।সুতরাং তাবলীগকে তাবলীগের জায়গায় রাখুন, তাবলীগি কায়দায় এই সমস্যা সমাধান করুন।জাতি আর বিভেদ দেখতে চায় না ।দেখতে চায়না বিক্ষোভ,সমাবেশ আর রক্তপাত।গোটা জাতি আজ নতুন সূর্যের অপেক্ষায়।
আরো যে সকল অভিযোগ আছে, অধিংশ উনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আমিরের পদ থেকে সরানোর পায়তারা ছাড়া কিছুই নয়। পরিশেষে এ কথা বলব, কে হক আর কে বাতিল, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন। আল্লাহ আমাদের হকের পক্ষে থাকার তৌফিক দান করুক। আমিন।।

No comments

Powered by Blogger.