খিজির খাইরুদ্দীন বারবারোসার ইতিহাস
খিজির খাইরুদ্দীন বারবারোসার ইতিহাস
আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরে যেখানে একচ্ছত্র আধিপত্যবিস্তার করত ইউরোপিয়ানরা, সেখানে হঠাৎ করেই ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটল তুর্কি-উসমানিদের! লাল দাড়িওয়ালা একটা অসীম সাহসী লোকের বদৌলতে। ক্রুশের পতাকাবাহী জাহাজগুলো নাকানিচোবানি খেতে লাগল তার চাঁদতারা খচিত লাল পতাকাকাবাহী জাহাজগুলোর সামনে! আপনারা অনেক পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান নামক মুভিটি দেখেছেন, এই মুভিটি বারবারোসা ভাইদের জীবনী থেকে অনুপ্রানিত। মুভিতে বারবোসাকে একজন দুষ্ট লোক হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল, লোভে পরিপূর্ণ একজন মানুষ যিনি কিনা তার লাভের জন্য মানুষকে হত্যা করতেও দ্বিধা করতেন না। কিন্তু প্রকৃত বারবারোসা ছিলেন একজন ভিন্ন মানুষ।
খিজির খায়রেদ্দিন বারবারোসা, তিনি ছিলেন 16 শতকের সবচেয়ে বিখ্যাত অটোমান চিফ অ্যাডমিরাল যিনি ইতালীয় এবং স্প্যানিশদের কাছে ছিলেন সাক্ষাত যমদূতের মতো।ইউরোপীয়রা তার নৌ যুদ্ধের কৌশল এবং একজন যোদ্ধা হিসেবে তার দক্ষতাকে ভয় করত। তিনি সাহসিকতার সাথে খ্রিস্টানদের দখলে থাকা বন্দরগুলিকে বিজয় করেছিলেন, স্পেন এবং ইতালি থেকে একের পর এক জাহাজ জব্দ করেছিলেন। উনার মিশন ছিল মূলত আলজিয়ার্স এবং উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য অংশ বিজয় করা।
খিজির যিনি, তুর্কিদের কাছে খায়রুদ্দিন বারবারোস নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন অটোমান নৌ যোদ্ধাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা, সবচেয়ে সাহসী এবং সবচেয়ে সফল। তিনি 1475 সালে লেজবোসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।তিনি এবং তার ভাই ওরুজ 1512 সালের মধ্যে খ্রিস্টান লক্ষ্যগুলির বিরুদ্ধে সফল নৌ যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তিনি ভূমধ্যসাগরীয় সমস্ত প্রধান ভাষা যেমন গ্রীক, আরবি, স্প্যানিশ, ইতালীয় এবং ফরাসি এসব ভাষায় কথা বলতে পারতেন। তার হৃদয়স্পর্শী কথা বলার জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন তিনি তার সহকর্মীদের সাথে সুন্দর, বিনয়ী আচরনের মাধ্যমে তাদের মন জয় করে নিতেন । তিনি ছিলেন হাস্যজ্জল, এবং মার্জিত চরিত্তের অধিকারী ।
১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে অরুজ রইস ও খাইরুদ্দিন আলজেরিয়ার তালিমসান শহর বিজয় করেন। কিন্তু এর কিছু দিন পরই স্পেনীশরা পালটা হামলা চালায়, এবং মুসলিম বাহিনী প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। খিজিরের বড় ভাই সে যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান। স্প্যানিশরা আরুজের মাথা কেটে ইউরোপে নিয়ে যায়। তার কাটা মাথা ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ঘুরানো হয় বলে জানা যায়,। আরুজের কাটা মাথা যেদিক দিয়ে যেত সেখানকার গির্জায় ঘন্টা বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশ করা হত। আরুজের মৃত্যুতে ইউরোপিয়ানরা খুশি ছিল। তারা ভাবছিল আরুজের মৃত্যুর ফলে মুসলমানদের মনোবল ভেংগে যাবে। কিন্তু তাদের জানা ছিল না, শীঘ্রই তাদের মুখোমুখি হতে হবে এমন এক সেনাপতির, যিনি আরুজের চেয়েও দুর্ধর্ষ ও বিচক্ষণ। সামনের দিনগুলিতে যিনি একাই ইউরোপিয়ান বাহিনীর ঘুম কেড়ে নিবেন। সেই সেনাপতির নাম খাইরুদ্দিন বারবারোসা।
আরুজের মৃত্যুর পর মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব খিজিরের হাতে আসে। তিনি সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমন চালিয়ে বেদখল হওয়া অঞ্চল পুনর্দখল করেন, তিনি চাইলে স্বাধীন শাসক হিসেবে আলজেরিয়ায় নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। আরাম আয়েশে দিন কাটাতে পারতেনন। স্প্যানিশদের সাথে খাতির করে নিজের রাজত্ব দৃঢ় করতে পারতেন. পঞ্চম চার্লস উনাকে উত্তর আফ্রিকার কর্তৃত্বের পাশাপাশি স্পেনীশ নৌবাহিনীর চীফ এডমিরাল পদ দেয়ার প্রস্তাব দেন। খাইরুদ্দিন সেপথে গেলেন না। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তো আরাম আয়েশের জীবন চান না, তিনি চান সংগ্রামী জীবন । কাফেরদের বিরুদ্ধে মজলুম মুসলিমের পক্ষে অবিরাম সংগ্রাম।এদিকে সুলতান সেলিম মারা যাবার পর ক্ষমতায় বসেন সুলতান সুলাইমান । তিনিও পিতার মতো খাইরুদ্দিনকে সাহায্য করতে থাকেন। হায়রেদ্দিন অটোমানদের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং সময়ের সাথে তার সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পায়।
সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের তিনি আরও বেশি কাছাকাছি ছিলেন। ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে খাইরুদ্দিন আলজেরিয়ার একটি দ্বীপে অবস্থিত স্প্যানিশ দুর্গে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি ২০ দিন একটানা গোলাবর্ষণ করেন। পরে অই দুর্গের পতন হয়। স্প্যানিশরা পালিয়ে যায়, অনেকে বন্দি হয়। সে বছরই খাইরুদ্দিন ৩৬ টি জাহাজ নিয়ে স্পেনের উপকূলের বিভিন্ন শহরে যান এবং অনেক মুসলমানকে মুক্ত করে আলজেরিয়া নিয়ে আসেন। এভাবে খাইরুদ্দিন বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। খাইরুদ্দিন ৭০ হাজার বন্দী মুসলমানকে স্পেন থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। তিনি নিয়মিত ভূমধ্যসাগরে অভিযান পরিচালনা করছিলেন। একের পর এক ইউরোপিয়ান নৌবহরকে তিনি পরাজিত করতে থাকেন। তিনি হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সুলাইমান খাইরুদ্দিন বারবারোসাকে ইস্তাম্বুলে আমন্ত্রণ করেন। খাইরুদ্দিন ৪৪ টি জাহাজ নিয়ে ইস্তাম্বুলের পথে রওনা হন। পথে যেসব দ্বীপে তিনি যাত্রাবিরতী করছিলেন সবখানেই উতসুক জনতা তাকে এক নজর দেখতে ছুটে আসেন। খাইরুদ্দিন ইস্তাম্বুল পৌছলে তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথীর মর্যাদা দেয়া হয়।
সুলতান সুলাইমান খায়েরুদ্দীনকে উসমানি নৌবাহিনীর প্রধান বা (কাপুদান-ই-দরিয়া) নিযুক্ত করেন। একইসাথে তাকে উত্তর আফ্রিকার বেলারবি বা (গভর্নর)পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সুলতান তাকে রত্নখচিত একটি তরবারী উপহার দেন। খাইরুদ্দিনকে নির্দেশ দেয়া হয় একটি নতুন নৌবাহিনী গঠন করার। তাকে অস্ত্রাগার ও গোল্ডেন হর্নের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়। খাইরুদ্দিন দ্রুত কাজ শুরু করেন। এক বছরে ৮৪ টি জাহাজ নির্মান হয়। খাইরুদ্দিন তার বহর নিয়ে ইতালির কয়েকটি দ্বীপে অভিযান পরিচালনা করেন। কয়েকটি শহর উনার নেতৃত্বে উসমানিদের দখলে আসে। সেই সঙ্গে উত্তর আফ্রিকা এবং রোডসের প্রধান প্রশাসক হিসেবেও নিয়োগ পান বারবারোসা।
পরের বছরগুলোতে বারবারোসা তিউনিস এবং ত্রিপলি অটোমান শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন। অ্যাডমিরাল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর, হাইরেদ্দীন বারবারোসা দুই দশক ধরে উত্তর আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগর এবং পূর্ব আটলান্টিকে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন। তার কয়েক ডজন রণতরী ছিলো, সেই সঙ্গে নৌ ও স্থলবাহিনীর বিশাল এক বহর। এই বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে ভূমধ্যসাগরে অটোমান প্রভাবকে পাকাপোক্ত করে তোলেন তিনি। তারপর নজর দেন দক্ষিণ ইউরোপের উপকূলবর্তী এলাকায়। আমেরিকার সঙ্গে স্পেনীয়দের বাণিজ্যিক পথগুলো একে একে বন্ধ করে দিতে থাকে তার বাহিনী। এসব নৌ অভিযান থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদও অর্জন করে তারা।
একের পর এক হামলায় বিপর্যস্ত ইউরোপিয়ানরা
সিদ্ধান্ত নেয় এবার তারা খাইরুদ্দিনের উপর চুড়ান্ত হামলা করবে। ভূমধ্যসাগর থেকে মুসলিম
নৌবহরকে বিতাড়িত করা হবে। পোপ তৃতীয় পল বারবারোসার বিরুদ্ধে একটি নৌ ক্রুসেডের আয়োজন
করেন। পোপের নেতৃত্বে পাপাল রাজ্য, স্পেন, জেনোয়া, ভেনিস প্রজাতন্ত্র এবং মালটার নাইটদের
সমন্বয়ে একটি যৌথ নৌবাহিনী গড়ে তোলা হয়। যৌথ বাহিনীর নাম দেওয়া হয় ‘হলি লীগ বা পবিত্র
সংঘ’। এই বাহিনীর লক্ষ্য ছিলো যেকোনো মূল্যে বারবারোসার নেতৃত্বাধীন অটোমান নৌবাহিনীকে
পরাজিত করা। করেন। পুরো ইউরোপে বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। গঠিত হয় সে সময়ের সবচেয়ে
বড় নৌবাহিনী।
ইউরোপিয়ানদের প্রস্তুতির খবর পৌছে যায় খাইরুদ্দিনের
কাছে। তিনিও তার বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত হতে থাকেন। অবশেষে ১৫৩৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দুই বাহিনী
গ্রীসের প্রিভেজা নামক সমুদ্রএলাকায় মুখোমুখি হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ।
ইউরোপিয়ান বাহিনীর মুখোমুখি উসমানি বাহিনী। ইউরোপিয়ানদের বিশাল বাহিনী। যুদ্ধ জাহাজ এসেছে ৩০২ টি। মোট অপরদিকে উসমানি বাহিনীর জাহাজ ১২২ টি। ইউরোপিয়ান বাহিনীর নেতৃত্বে আন্দ্রে ডোরিয়া। মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে খাইরুদ্দিন বারবারোসা।
বাহ্যিক শক্তির বিচারে দূর্বল উসমানি বাহিনী ইউরোপিয়ান
বাহিনীর সামনে বেশিক্ষণ টেকার কথা নয় ।
খাইরুদ্দিন বারবারোসা তার বহরকে চারটি ভাগে বিভক্ত
করেন। প্রথম তিনটি বহর তিনি বক্রাকারে সাজান। যুদ্ধের শুরুতেই এই তিন বহর বক্রাকারে
এগিয়ে যায় ইউরোপিয়ান বাহিনীর দিকে। আন্দ্রে ডোরিয়া অবাক হয়ে দেখলেন উসমানি বাহিনী তাকে
ঘিরে ফেলতে চাচ্ছে। স্বল্পসংখ্যক উসমানি বাহিনী থেকে এমন দুঃসাহসিক হামলা রীতিমত অবিশ্বাস্য।
এন্ড্রিয়া ডোরিয়া তার বহর নিয়ে সরে যেতে চাইলেও বাতাস স্থির থাকায় তার চেষ্টা সফল হয়
না। ইতিমধ্যে খাইরুদ্দিনের বহর থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়। ইউরোপিয়ান বাহিনী পাল্টা
জবাব দেয় কিন্তু খাইরুদ্দিনের প্রথম আক্রমণ তাদের মনোবলে ফাটল ধরাতে সক্ষম হয়। বিপুল সেনা থাকা সত্ত্বেও ইউরোপিয়ান বাহিনীর মনোবল
ভেংগে যায়। সাত ঘন্টার লড়াই শেষে ইউরোপিয়ান বাহিনী পরাজিত হয়। আন্দ্রে ডোরিয়া পালিয়ে
যায়। যুদ্ধে ইউরোপিয়ানদের১৩টি জাহাজ পুরোপুরি ধবংস হয়। ৩৬ টি জাহাজ উসমানিয়
নৌবাহিনী দখল করে। ৩০০০ ইউরোপিয়ান সেনাকে বন্দি করেন। অপরদিকে উসমানিয়দের ৪০০ সেনা
নিহত হন, ৮০০ আহত হন। তাদের কোনো জাহাজই হারাতে হয়নি।
এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল অবিশ্বাস্য। শীঘ্রই এই যুদ্ধের
সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে মুসলিম বিশ্বজুড়ে। মক্কা, মদীনা, আল কুদস, সমরকন্দ, দামেশক, কায়রোর
মসজিদ্গুলোর মিনার হতে উচ্চারিত হতে থাকে আল্লাহু আকবর ধবনী।
এই যুদ্ধের ফলে ভূমধ্যসাগরে উসমানিয়দের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত
হয়। পরবর্তী তিন শতাব্দী ধরে ভূমধ্যসাগরের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতেই। এমনকি ইংল্যান্ড,
ডেনমার্ক, ফ্রান্স, হল্যান্ড ও সিসিলির জাহাজগুলো ভূমধ্যসাগরে চলার জন্য উসমানিয়দের
ট্যাক্স দিত।
১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দে খাইরুদ্দিন ইতালির সানরেমো, বোরঘেট্টো
সান্টো স্পিরিটো ও সিরাইলিতে আক্রমন করেন। তিনি স্পেন ও ইতালির নৌবহরকে পরাজিত করেন।
নেপসলের ভেতরে হামলা চালান। এরপর তিনি ২১০ জাহাজের পুরো বহর নিয়ে জেনোয়ার দিকে রওনা
হন। সেখানে তুর্কি এডমিরাল তুরগুত রইসকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। খাইরুদ্দিন হুমকি দেন
রইসকে মুক্তি না দিলে তিনি শহরে হামলা চালাবেন।
জেনয়ার ফাসোলতে এন্ড্রিয়া ডোরিয়ার প্রাসাদে খাইরুদ্দিনের সাথে বৈঠক হয়। শেষে সিদ্ধান্ত হয় ৩ হাজারের স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে রইসকে মুক্তি দেয়া হবে।
এরপর খাইরুদ্দিন এলবো শহরের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হন। এই শহরে অটোমান নৌকমান্ডার সিনান রইসের পুত্র বন্দী ছিলেন। খাইরুদ্দিন হুমকি দেন তাকে মুক্তি দেয়া না হলে তিনি শহরে গোলাবর্ষন করবেন। শহরের প্রশাসক খাইরুদ্দিনের কথায় রাজি না হলে খাইরুদ্দিন তীব্র হামলা চালান। শেষে বারবারোসার তীব্রতার কাছে শহরের প্রশাসক হার মানতে বাধ্য হন। সিনান রইসের পুত্রকে মুক্তি দেয়া হয়।
ঐতিহাসিক হাজি খলিফা লিখেছেন, বারবারোসা
১২ টি দ্বীপ বিজয় করেন। আরো ১৩টি দ্বীপে অভিযান চালিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হন। তার অভিযানে
মোট ১৬ হাজার লোক বন্দী হয়। মুক্তিপণ হিসেবে পাওয়া যায় চার লাখ স্বর্নমুদ্রা।
খাইরুদ্দিন বারবারোসার সারাজীবন কেটেছে সমুদ্রে। একের
পর এক লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। চাইলেই নির্বিঘ্ন জীবন বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু সে
পথে হাটেননি কখনো। উম্মাহর কল্যানসাধনের মাঝেই খুজে পেয়েছিলেন সুখ।
পুথিগত বিদ্যায় খাইরুদ্দিন হয়তো বড় কেউ ছিলেন না। কিন্তু
তার জীবনটাই হয়ে উঠেছে উত্তরসূরিদের জন্য হাজারো বইয়ের চেয়ে মূল্যবান কিছু।
দীর্ঘসময়ের রোমাঞ্চকর একটি কর্মজীবন পার করার পর, হাইরেদ্দীন বারবারোসা ১৫৪৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি তার পুত্র পুত্র হাসান পাশাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে খাইরুদ্দিন বারবারোসা ইস্তাম্বুলে ফিরে আসেন। । এবং বেশ কিছু প্রতিষথান নির্মান করেন। তিনি মুরাদি সিনানকে তার আত্মজীবনি লেখার জন্য নির্দেশ দেন। পাচ খন্ডে লেখা আত্মজীবনি গাজাওয়াত-ই-খাইরুদ্দিন নামে এই মহান যোদ্ধা ৪ জুলাই ১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দে ইস্তাম্বুলে ইন্তেকাল করেন।
উনার সমাধিটি বসফরাসের
ইউরোপীয় অংশের ব্যসিকটাস শহরে রয়েছে, যে সমাধিটি তৈরি করেছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত স্থপতি
মিমার সিনান।
সেখানে সমুদ্রের দিকে ফেরানো বারবারোসার একটি মূর্তিও রয়েছে।
পরবর্তী বহু বছর ধরে সমুদ্রগামী নাবিকরা তাদের পরম শ্রদ্ধেয় নেতাকে দেখে সম্মান জানাতো।
No comments